বিশেষজ্ঞদের মতে সপ্তাহে তিন বা তার চেয়ে কম বার মলত্যাগ করলে তাকেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। আর এই প্রক্রিয়া যদি তিন মাস যাবৎ হয়ে থাকে তবে তাকে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। মূলত অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন ও অসম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয়ে থাকে।
তাছাড়াও কিছু রোগ ও ঔষধ গ্রহনের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। আমাদের গৃহীত খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছালে তা বিভিন্ন পাঁচক রহস্যের সাহায্যে হজম হয়। অতঃপর শরীর বিভিন্ন প্রয়োজনে পুষ্টি শোষণ করে বাকি অংশ মল হিসেবে বাইরে বের করে দেয়।
বিভিন্ন কারণে মল শুষ্ক ও শক্ত হয়ে কোলনে আটকে থাকে যা শরীর থেকে সহজে নিষ্কাশিত হয় না আর হলেও তা অনেক কষ্টদায়ক হয়। অনেক ক্ষেত্রে অসাবধানতাবসত বড় আকারে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয় তা কিভাবে প্রতিকার করা যায় তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
কোষ্ঠকাঠিন্য বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। নিম্ন কিছু কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
১. সেলুলোজ বা আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ:
পর্যাপ্ত আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আঁশ জাতীয় খাবার মলকে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে মল নরম হয়। এ কারণে মল সহজেই দেহ হতে নিষ্কাশিত হতে পারে। আঁশ জাতীয় খাবার না খেলে মল শুষ্ক ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে তা সহজে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেনা। ফলস্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
২. পর্যাপ্ত পানি পান না করা
খাবারে যদি পর্যাপ্ত আঁশ থাকে তবে তা পানি ধারণ করে মলকে নরম করে কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পান না করলে আঁশ মলকে আরো শক্ত করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
৩. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব বা অতিরিক্ত ঘুম
শারীরিক পরিশ্রম না করলে মল এক জায়গায় পুঞ্জিভূত থাকে। ফলে মল জমাট বেঁধে বড় আকার ধারণ করে ও শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে।
৪. মল পেটে আটকে রাখা
অনেকে বিভিন্ন কারণে পেটের ভেতর মলকে আটকে রাখে বা রাখার চেষ্টা করে যা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।মল যখন আটকে থাকে শরীর তা থেকে ক্রমান্বয়ে পানি শোষন করতে থাকে। ফলে মল শক্ত হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে।
৫. ওষুধের ক্রিয়া
কিছু ঔষধ আছে যা মলকে শক্ত ও দৃঢ় করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে। যেমন: ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, আয়রন ট্যাবলেট, ভিটামিন, এন্টাসিড, ডায়রিয়া বন্ধের ঔষধ, আইবুপ্রোফেন জাতীয় ঔষধ গুলির কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
৬. বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে-
বিভিন্ন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার, থাইরয়েডের সমস্যা, টিউমার, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৭.ফাস্টফুড
ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যেমন পিৎজা, বার্গার পাস্তা ইত্যাদি ছাড়াও ভাজাপোড়া, চিপস, চা, কফি, কাঁচকলা, লাল মাংস ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
৮.বিষন্নতা
গবেষণায় দেখা গেছে যাদের মধ্যে বিষন্নতা আছে তাদের অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। এর কারণ তাদের প্রত্যহ কাজকর্মের অনিয়ম ও খাদ্দাভ্যাস।
৯.গর্ভধারণ
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও কোষ্ঠকাঠিন্য পরিলক্ষিত হয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য কতটা মারাত্মক হতে পারে:
এটা মারাত্মক কোন বিষয় নয়। তবে অসাবধানতার কারণে বড় আকারে ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য হলে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে দীর্ঘ সময় টয়লেটে অবস্থান করা ও অতিরিক্ত অভ্যন্তরীণ চাপ প্রয়োগের কারণে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে।
আবার দীর্ঘদিন মল আটকে থাকার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত রোগীরা বেশি বেশি অভ্যন্তরীণ চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। ফলে তাদের পায়ুপথ কাটাছেঁড়া হয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হোন। যেমন-
অর্শ বা পাইলস, ফিস্টুলা, এন্যাল ফিসার, রেক্টআল প্রোল্যাপস, ইনটেসটাইনাল অবস্ট্রাকশন, পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, অরুচি, মলাশয়ের ক্যান্সার, আই বি এস, থাইরয়েডের সমস্যা, পেরিএন্যাল অ্যাবসেস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে যা যা করণীয়-
দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার উপায় হলো নিয়ম মেনে খাদ্যাভ্যাস গঠন, কাইকপরিশ্রম ও মানসিক প্রফুল্লতাই পারে আপনাকে কোষকাঠিন্য থেকে রক্ষা করতে। আপনি যদি প্রতিবার খাবার গ্রহণের সময় আপনার স্টমাককে তিন ভাগে ভাগ করে একভাগ খাবার, একবার পানি ও একভাগ ফাঁকা রাখতে পারেন তবে আপনি যাবতীয় পেটের অসুখ থেকে মুক্তি পাবেন।
এই নিয়ম অনুসরণ না করার কারণেই আমরা নানান রকম পেটের অসুখে ভুগি। কোষ্ঠকাঠিন্য মূলত অসম খাদ্যের জন্যই হয়ে থাকে। খাদ্যে আঁশ জাতীয় খাবার কম থাকার কারণেই এই সমস্যা বেশি হয়। আঁশ জাতীয় খাবার পানি ধারণ করতে পারে ফলে মল স্বাভাবিকভাবেই নরম হয় ও দেহের বাইরে সহজে নিষ্কাশিত হয়।
কোন জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রক্ষা পাওয়া যায় ও কি কি করলে কোষ্ঠকাঠিন্যকে রোধ করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. বিভিন্ন ধরনের আঁশ সমৃদ্ধ শাকসবজি প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখতে হবে। যেমন-
টমেটো, শালগাম, মুলা, শিম, বাঁধাকপি, পালং শাক, ব্রকলি, বরবটি, মটরশুঁটি, বিটরুট, কলমি শাক, শসা, গাজর, ভুট্টা, গম, মসুর ডাল,
২. আঁশ যুক্ত বিভিন্ন ধরনের ফল কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে অনেক ভূমিকা রাখে। যেমন-
পেয়ারা, পাঁকাকলা, বেল, পেঁপে, কিউই, কমলা, নাশপাতি, আপেল।
৩. বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উপকরণ। যেমন-
সোনা পাতা, অ্যালোভেরা, তিশীর বীজ, তেতুলের বীজ, ইসুবগুলের ভুষি ইত্যাদি।
৪. ব্যাকটেরিয়া ঘটিত কিছু খাবার যেমন -
দই, কিমচি,কম্বুচা ইত্যাদি।