ধর্ম হলো নিজস্ব ও নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কাঠামো বা সিস্টেম। প্রত্যেক জাতি বা সম্প্রদায়ই একটি নির্দিষ্ট আইনের কাঠামো বা শৃঙ্খল দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে ।ধর্ম হলো এমন একটি কাঠামো বা সিস্টেম যা কোন বিশেষ সম্প্রদায় বা সমগ্র সম্প্রদায়ের পার্থিব ও অপার্থিব সকল কর্মকান্ডকে ধারণ করে। যার নিজস্ব আইন-কানুন জীবন দর্শন ও পরিচালনা পদ্ধতি থাকবে । তাই বলা যায় ধর্ম শুধু ধর্মশালায় উপাসনাকে বোঝায়না। বরং ব্যাক্তি থেকে পরিবার, পরিবার থেকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্র থেকে সমগ্র বিশ্বকে পরিচালনা করতে সকল ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয় থেকে বৃহদাকার বিষয়গুলো একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ।
তবে যে সকল ধর্মে উপাসনা ব্যতিত মানুষের জীবন ঘনিষ্ট সমস্যার তেমন কোনো নির্দেশনা থাকে না সে সকল ধর্মের অনুসারীরা ধর্মকে শুধু উপাসনার মাধ্যম ধরে ও জীবনকে পরিচালনা করতে নিজেরাই আইন তৈরী করে জীবন পরিচালনা করে। তাই বলা যেতে পারে সেই ধর্মের ভিত্তি তত বেশি শক্তিশালী যে ধর্ম যত বেশি সুশৃঙ্খল ও পর্যায়ক্রমিক বিধান দ্বারা জীবনধারণের প্রতি মুহূর্তকে দিক নির্দেশনা প্রদান করে।
অর্থাৎ
যে
ধর্মটি
একটি
পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা না
দিয়ে
আংশিক
তথ্য
দেয়
সেই
ধর্মটি
কখনই
পূর্ণাঙ্গ ধর্ম
বা
কাঠামো
বা
সিস্টেম হতে
পারেনা। একটি
পূর্ণাঙ্গ ধর্মে
বা
সিস্টেমে একটি
পরিপূর্ণ জীবন
বিধান
থাকবে
যা
জীবের
সকল
কর্মকাণ্ডকে একটি
সুশৃঙ্খল বিন্যাসে সজ্জিত
করবে
এবং
পরিচালনা করতে
নির্ভুল পথ
দেখিয়ে দেবে।
সঠিক
ধর্ম
কখনই
ভুল
বা
সাংঘর্ষিক তথ্য
দিবে
না।
কারণ
ধর্মের
একটি
ভুল
তথ্য
সম্পূর্ণ সিস্টেমকে পর্যাক্রমিকভাবে ধ্বংস
করবে।
ধর্মের
নিয়ম
কানুনগুলো যেহেতু
একই
সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সময়ে
সময়ে
বারংবার সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক
বদলায়
না।
তাই
এতে
ভুল
থাকলে
বা
এটি
অসুম্পূর্ণ হলে
আপনা
আপনি
ওই
সম্প্রদায়ের মধ্যে
নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি
হবে
এবং
প্রকৃত
সমাধান
না
পেয়ে
ঐ
সম্প্রদায় কর্তৃক
ধীরে
ধীরে
পরিত্যাজ্য হবে।
যেহেতু
ধর্ম
নিজেই
একটি
পূর্ণাঙ্গ কাঠামো
তাই
যে
জাতি
একটি
পূর্ণাঙ্গ ধর্মের
অন্তর্ভুক্ত হবে
তাঁদের
জীবনযাপন করতে
সামান্যতম কারণেও
অন্য
কোনো
ধর্ম
বা
আইনের
কাঠামোর উপর
নির্ভর
করতে
হবে
না
বা
অন্য
কোনো
কাঠামো
থেকে
কোনো
আইন
কানুন
গ্রহণ
করতে
হবেনা।
কোন
ধর্মে
যদি
মানবজীবন পরিচালনায় পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পদ্ধতি
না
থাকে
তাহলে
স্বাভাবিকভাবেই আমরা
বলতে
পারি
সেই
ধর্মের
স্রষ্ঠা বা
প্রবক্তা দূর্বল
। আর এই
দূর্বল
স্রষ্ঠা কিভাবে
একটি
জাতিকে
নির্ভূল পথ
প্রদর্শন করবে।
কিন্তু
আমরা
জানি
স্রষ্টা সকল
ভূলের
উর্ধ্বে ।
যেহেতু
স্রষ্টা নিজেই
সব
কিছু
সৃষ্টি
করেছেন
তাই
তার
রচিত
আইনের
কাঠামো
বা
সিস্টেম বা
ধর্ম
কখনো
অসম্পূর্ণ হতে
পারে
না।
এমনকি
তার
দেওয়া
ধর্মই
কোনো
বিশেষ
সৃষ্টি
বা
সমগ্র
সৃষ্টিকে সবচেয়ে
বেশি
সুশৃঙ্খল ও
নির্ভুল জীবনযাপন করতে
সর্বোত্তম নির্দেশনা দিবে।
শাব্দিক অর্থে
ধর্ম
বলতে
আমরা
মত,
পথ,
আস্থা,
বিশ্বাস ইত্যাদিকে বুঝে
থাকি।
কিন্তু
এই
শব্দগুলো এককভাবে নয়
বরং
গভীরভাবে অনুধাবন করলে
দেখা
যায়
শব্দগুলি সমন্বিতভাবে শব্দটিকে অলংকৃত
করছে।
অর্থাৎ
ধর্ম
হলো
একটি
পথ
যাকে
অনুসরণ
করলে
এবং
যার
উপর
আস্থা
ও
বিশ্বাস স্থাপন
করলে
ধর্ম
শব্দটি
পরিপূর্ণতা লাভ
করে।
পৃথিবীতে অসংখ্য মতের
ও
বিশ্বাসের ধর্ম রয়েছে। যার মধ্যে
অনেক
ধর্মই
মানবসৃষ্ট আবার
কেউ
কেউ
যথোপযুক্ত প্রমাণ
সাপেক্ষে দাবী
করে
তাদের
ধর্ম
সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক
প্রদত্ত। তাই ধর্মকেও এই
দুটি
ধারণার
আঙ্গিকে দুই
ভাগে
বিভক্ত
করা
যায়।
১. স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত ধর্ম
২.
মানুষ
কর্তৃক
রচিত
ধর্ম
১. স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত ধর্ম
এই জাতীয়
ধর্মে
এক
বা
একাধিক
স্রষ্টা রয়েছেন। সকল
ধর্মে
দুটি
অবস্থা
খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। যথা
:
ক । পার্থিব জগৎ।
খ
। অপার্থিব জগৎ।
এক্ষেত্রে স্রষ্টা মানুষকে সঠিক ও মঙ্গলজনক পথ প্রদর্শনের জন্য একটি নির্দেশনা দেন। পার্থিব জগতে কোনো ব্যাক্তি এই নির্দেশনা যতটুকু পালন করবে বিচার শেষে অপার্থিব জগতে সে তার ততটুকু প্রতিদান পাবে। তাই বলা যায় স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত ধর্মের আইন কানুন এমন হবে যা মানুষ ভালো মন্দ যাই করুক সবকিছুকে পরিমাপ করতে পারবে।
আমি যদি বলি একটা মানুষ অপর একটি মানুষকে গালি দিয়েছে। তাহলে এই পার্থিব জগতে এমন কোনো যন্ত্র আছে কি যা গালি দেওয়ার কারণে অপর ব্যাক্তি কতটুকু কষ্ট পেলো বা যে গালি দিলো তাকে কতটুকু শাস্তি দিলে বিন্দুমাত্র অন্যায় হবে না, এটা নির্ণয় করতে পারবে?
না,
এটা
সম্ভব
নয়।
এইরকম
অসংখ্য
সমস্যা
রয়েছে
যা
যতই সুক্ষ্ম হোক
স্রষ্টা তা
বিচার
করবেন
ও
তার
উপর্যুক্ত প্রতিদান দিবেন
এবং
বিন্দুমাত্রও অবিচার
করবেন
না।
২.
মানুষ
কর্তৃক
রচিত
ধর্ম
আবার মানব সৃষ্ট ধর্মের ক্ষেত্রে দেখা যায়- মানুষ নিজেই নিজেকে বা অন্য কোন মানুষকে অথবা কোনো জীব বা জড় বস্তুকে স্রষ্টার আসনে বসিয়ে নিজস্ব মত এবং সময় ও অবস্থা সাপেক্ষে বিবেচ্য আইন দ্বারা ধর্ম বা কাঠামো বা সিস্টেম তৈরি করে থাকে। এক্ষেত্রে যে ব্যাক্তি ধর্ম রচনা করেন তার উপর নির্ভর করে ধর্মটি কতটা শক্তিশালী হবে । যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে জ্ঞানীগুণী ও সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তিবর্গ কোনো জাতির কল্যাণ সাধনের জন্য অথবা নিজেদের ক্ষমতাকে ওই জাতির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে ও তাঁদের কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতে নানা ধর্মর সৃষ্টি ও উপাসনার কায়দা কানুন তৈরী করেছেন।
আবার
অনেকে
ওই
সকল
ধর্মকে
পরিবর্ধন, পরিমার্জন করে
মানুষের উপযোগী
করে
তোলার
চেষ্টা
করেছেন। ফলে
অনেক
ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়
এবং
সৃষ্ট
ধর্মের
অসম্পূর্ণতা ও
ভুল
নির্দেশনার কারণে
অনেক
ধর্মের
বিলুপ্তি ঘটে।
আবার
অনেক
ধর্ম
ধীরে
ধীরে
তাঁদের
অনুসারী হারিয়ে
কোনো
রকমে
টিকে
আছে
অথবা
প্রায়
বিলুপ্তির পথে।
যার কারণে
সকল
ঐশ্বরিক ও
পার্থিব ধর্মগুলোর মধ্যে
ভিন্ন
ভিন্ন
ধ্যান
ধারণা,
আচার
অনুষ্ঠান, উপাসনার রীতিনীতি ও
বিশ্বাস পরিলক্ষিত হয়।
এত
পার্থক্য থাকা
সত্ত্বেও সকল
ধর্মই
মানুষকে সাম্যের দিকে
আহ্বান
করে।
মানুষে
মানুষে
ভাতৃত্বের কথা
বলে।
মানুষকে মানবতার শিক্ষা
দেয়।
যেহেতু
প্রতিটি ধর্মের
নিজস্ব
পরিচালনা পদ্ধতি
রয়েছে
তাই
তাদের
এই
আহবান
ও
ভিন্ন
ভিন্ন
হতে
পারে।
ধর্মের
পরিচালনা পদ্ধতি
ভিন্ন
ভিন্ন
হলেও
সকল
ধর্মই
নিম্নক্ত মূলনীতিকে সার্বিক দিক
থেকে
সত্যয়ন
করে।
কোন বিশেষ
জাতি
বা
সমগ্র
মানবজাতিকে একটি
নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে
দিতে
প্রণয়নকৃত সুশৃংখল কর্ম
পরিকল্পনা বা
দিক
নির্দেশনাই হলো
ধর্ম।
অতএব
সমগ্র
আলোচনা
থেকে
আমরা
এই
সারমর্মে উপনীত
হতে
পারি
যে
ধর্ম
হলো
সেই
মহাপরিকল্পনা যেখানে
একটি
রাষ্ট্রের অধিপতি
কিভাবে
জীবন
ধারণ
করবেন
তা
যেমন
অন্তর্ভুক্ত থাকবে
তেমনি
একটি
অভুক্ত
শিশুর
মুখে
কিভাবে
খাবার
পৌঁছে
যাবে
তারও
দিক
নির্দেশনা থাকবে।